প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদা যোজনার আওতায় মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে

ওয়েব ডেস্ক; ১৩ জুলাই: মাছকে প্রাণীজ প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অন্যতম স্বাস্থ্যকর উৎস হিসেবে মনে করা হয়। অপুষ্টি দূর করতে এর ভূমিকা বিশেষ। জলীয় কৃষি বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি করছে। প্রোটিনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। পাশাপাশি, এই ক্ষেত্র থেকে দেশের ৩ কোটিরও বেশি মৎস্যজীবীর কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রা চালনা করা সম্ভব হয়। এই ক্ষেত্রের বিশেষ সম্ভাবনার কথা নজরে রেখে ভারত সরকার নীল বিপ্লব এনেছে এবং ২০ হাজার ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প ‘প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদা যোজনা (পিএমএমএসওয়াই)’ চালু করেছে।
জলীয় কৃষির ক্ষেত্রে রোগ, উন্নয়নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। জলজ প্রাণীদের বিভিন্ন রোগের জন্য কৃষকরা বড় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ধারণ করা গেলে, তা নির্ধারণ করা সহজ হয়। সঠিক পদ্ধতিতে নজরদারির মাধ্যমেই জলজ প্রাণীদের বিভিন্ন রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা সম্ভব। কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের পশুপালন, দুগ্ধ ও মৎস্য দপ্তর ২০১৩ সালে হায়দরাবাদের জলজ প্রাণীর রোগ নির্ধারণের জন্য একটি জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ১৪টি রাজ্যে এই কর্মসূচি চালু রয়েছে। আইসিএআর – এর সমন্বয় করছে। পরবর্তীতে সামুদ্রিক পণ্যের রপ্তানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্যের মৎস্য বিভাগের সহায়তায় তিন বছরের জন্য ৩৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এনএসপিএএডি – এর দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু হয়েছে। চেন্নাইয়ের আইসিএআর – সিআইবিএ’তে ভারত সরকারের মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধ বিষয়ক মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পুরুষোত্তম রুপালা ২০২৩ – এর ২৭ ফেব্রুয়ারি এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
৯ বছরেরও বেশি সময় এনএসপিএএডি এই প্রকল্পটি চলবে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হ’ল – ১) দেশে জলজ প্রাণীর স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণাগারগুলির মধ্যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করা। ২) বিশ্ব পশু স্বাস্থ্য সংগঠনে নথিভুক্ত জলজ প্রাণীর রোগ সম্পর্কে খোঁজখবরের জন্য নজরদারি বৃদ্ধি। ৩) দেশে নিষ্ক্রিয় রোগ নজরদারি ব্যবস্থাপনাকে আরও মজবুত করা। ৪) রোগের মোকাবিলায় কৃষকদের বৈজ্ঞানিক পরামর্শ দেওয়া। ৫) দেশে প্রথমবার নতুন ৯টি রোগের সন্ধান মিলেছে। ৬) বিদেশি এবং নতুন করে দেখা দেওয়া রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও এর ছড়িয়ে পড়া রুখতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেওয়া। ৭) জলজ প্রাণীদের এএইচপিএনডি রোগ সম্পর্কে সফলভাবে দেশে সচেতনতা বাড়ানো ও এই রোগ দূর করা। ৮) বিশ্ব পশু স্বাস্থ্য সংগঠন এবং ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলজ প্রাণীর রোগ সম্পর্কে নেটওয়ার্ক তৈরি করা।
এই কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের যথাযথ তথ্য পৌঁছে দিতে ‘রিপোর্ট ফিশ ডিজিজ’ বা ‘মাছের রোগ সম্পর্কে খবর’ বিষয়ক অ্যাপ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রুপালা ২৮ জুন, ২০২৩ তারিখে এই অ্যাপটির সূচনা করেন। এই উদ্ভাবনমূলক অ্যাপটি কৃষকদের রোগ সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি তৃণমূল স্তরে মৎস্যজীবীদের দ্রুত বৈজ্ঞানিক পরামর্শ দিতে সক্ষম হবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে মৎস্যজীবী, প্রাথমিক স্তরের আধিকারিক ও মৎস্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সমন্বয় তৈরি হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচির যে চিন্তাভাবনা করেছেন, তা দেশকে ক্রমাগত ডিজিটাল ক্ষেত্রকে সক্ষম করে তুলছে। এই ধরনের অ্যাপ কৃষকদের মাছের রোগ সম্পর্কিত সমস্যা মোকাবিলায় বিশেষ সহায়ক হবে। ফলে, কৃষকরা আর্থিক ক্ষতি এড়াতে পারবেন। সময় মতো রোগ সম্পর্কে যথাযথ বৈজ্ঞানিক পরামর্শ হওয়ায় সচেতন হবেন কৃষকরা এবং তাঁদের আয়ও বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.