ওয়েব ডেস্ক; ৫ ফেব্রুয়ারি: সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের যে বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন তাতে বলা হয়েছে যে দেশে জিডিপি বৃদ্ধির হার ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১৫.৪ শতাংশের মতো হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ১৯.৫ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০২১-২২ আর্থিক বছরে প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধির হার যেখানে পরিলক্ষিত হয়েছিল ৮.৭ শতাংশের মতো, আলোচ্য বছরে অর্থাৎ, ২০২২-২৩ সালে তা ৭ শতাংশের মতো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
কৃষিক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি
অনুমান করা হচ্ছে যে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ভারতের কৃষিক্ষেত্রে অগ্রগতির হার ৩.৫ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। দেশের কৃষিপণ্যের চাহিদা মিটিয়েও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত দ্রুত কৃষি রপ্তানির ক্ষেত্রেও একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে কৃষিপণ্য রপ্তানির মাত্রা ৫০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, দেশের মোট খরিফ শস্য উৎপাদনের পরিমাণ ১৪৯.৯ মিলিয়ন টনে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে খরিফ শস্য উৎপাদনের নিরিখে এর গড় হার অনেক বেশি বলে জানা গেছে। তবে, ২০২১-এর তুলনায় আলোচ্য সময়কালে দেশে প্রায় ২০ লক্ষ হেক্টরের মতো কম জমিতে ধানের চাষ করা হয়েছে।
কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনের উচ্চহার বজায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। রবিশস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও দেশ বর্তমানে বেশ এগিয়ে রয়েছে। কারণ, পূর্ববর্তী বছরগুলিতে রবিশস্যের আওতায় যে পরিমাণ জমিকে নিয়ে আসা হয়েছিল আলোচ্য বছরে তার থেকে বেশি জমিতে রবিশস্যের ফলন আশাপ্রদ বলে জানা গেছে। ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতি যে পুনরায় চাঙ্গা হয়ে উঠতে চলেছে, এ হল তারই পূর্বাভাস।
ভারতের শিল্পক্ষেত্র – এক বিশেষ চালিকাশক্তি
২০২১-২২ আর্থিক বছরে দেশের শিল্পক্ষেত্রে অগ্রগতির হার ছিল ১০.৩ শতাংশ। তুলনায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তা ৪.১ শতাংশের মতো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের যানশিল্পের বিপণন প্রচেষ্টায় ২০২২-এর ডিসেম্বরে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে ৫.২ শতাংশের মতো। দেশে নির্মিত ট্র্যাক্টর এবং দুই ও তিন চাকার গাড়ির বিক্রি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর – এই সময়কালে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। পল্লী জীবনে এগুলির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়াতেই এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
পরিষেবা ক্ষেত্র – অগ্রগতির এক বিশেষ দ্যোতক
দেশের পরিষেবা ক্ষেত্র আবার ঘুরে দাঁড়ানোর মুখে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে অগ্রগতির হার ৯.১ শতাংশে উন্নীত হওয়ার আশা রয়েছে যা কিনা ২০২১-২২ আর্থিক বছরের ৮.৪ শতাংশের তুলনায় স্পষ্টতই বেশি। ঠিকা ও চুক্তিভিত্তিক পরিষেবা খাতে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অগ্রগতির হার সম্ভাবনাময় বলে জানা গেছে। বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচির সাফল্যও দেশের পরিষেবা ক্ষেত্রটিকে এখন চাঙ্গা করে তুলেছে। আশা করা হচ্ছে যে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পরিষেবা ক্ষেত্রে উন্নয়নের হার ৭.৭ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে। তবে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই হার ছিল ৭.৯ শতাংশের মতো।
রপ্তানি বাণিজ্য
অনুমান করা হয়েছে যে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে ১২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটতে পারে। যোগান শৃঙ্খলে ব্যঘাত এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও অগ্রগতির এই হার পরিলক্ষিত হয়েছে। জিডিপি-তে রপ্তানি বাণিজ্যের অংশ ২০১১-১২-র মূল্য পরিস্থিতি অনুযায়ী ২২.৭ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই হারের মাত্রা ছিল ২১.৫ শতাংশ।
উন্নয়ন সম্ভাবনা
দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি এবং মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩-২৪-এর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির একটি সম্ভাবনাময় চিত্র ফুটে উঠেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে দিয়ে এবং দেশের অর্থনীতিতে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা অক্ষুণ্ণ রাখার প্রচেষ্টায় সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা যে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে চলেছে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর্থিক ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা পূরণ – এই দুটি বিষয়ও এক্ষেত্রে এক বিশেষ চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারিভাবে ডিজিটাল পরিকাঠামো প্রসারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে, অপেক্ষাকৃত স্বল্প আয় ও উপার্জন করেন এ ধরনের নাগরিক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দোকানদারদেরও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রচেষ্টার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় পরিবহণ নীতি এবং পিএলআই কর্মসূচি দেশের নির্মাণ তথা পরিকাঠামো ক্ষেত্রকে আরও মজবুত করে তুলতে সাহায্য করবে। সেইসঙ্গে মূল্য শৃঙ্খলের ক্ষেত্রে ব্যয়ের মাত্রা কমিয়ে এনে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির হারকে নিরন্তর করে তোলার ধারা অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করা হবে বলে আশা ব্যক্ত করা হয়েছে।