ডিজিটাল; ৫ নভেম্বর: ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ হেমাটোলজি ও ব্লাড ট্রান্সফিউশনের (ISHBT) তেষট্টিতম বার্ষিক সন্মেলন HAEMATOCON – 2022 কলকাতার বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে ৩রা থেকে ৬ই নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গতকাল ৪ঠা নভেম্বরের সন্ধ্যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সরকারের আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের মাননীয় মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ও অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথিরূপে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম বঙ্গ সরকারের ডিরেক্টর অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অধ্যাপক দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য। এছাড়াও ISHBT সভাপতি অধ্যাপক H. পতি, ISHBTর প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট অধ্যাপক শেহনাজ খোদাজি, অর্গানাইজিং চেয়ার পার্সন অধ্যাপক আর কে জেনা, অর্গানাইজিং সেক্রেটারি ডাঃ তুফানকান্তি দোলাই, ISHBTর সম্পাদক অধ্যাপক মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য্য , অধ্যাপক শর্মিলা চন্দ্র প্রমুখ প্রখ্যাত হেমাটোলজিস্টরা বক্তব্য রাখেন।
আমাদের দেশ ব্যাপকভাবে বিভিন্ন সংক্রামক, রোগ ক্রনিক অসুখ বা লাইফস্টাইল ডিজিজের মোকাবিলা করেছে। এইসব অসুখ নিয়ে জনসাধারণ অনেক সচেতন। কিন্তু এসবের বাইরেও ভারতে এক বিশাল সংখ্যক মানুষ অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, সিকলসেল অ্যানিমিয়া, হিমোফিলিয়া বা বিভিন্ন ধরণের রক্তের ক্যানসারে ভুগছেন।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ভারতের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ, বংশগত কারণে, বিভিন্ন অসুখের জন্য বা শুধু অপুষ্টির কারণেই অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন। জিনগত লোহিত রক্ত কণিকার অসুখের বা ‘হিমোগ্লোবিউনোপ্যাথি’র উপস্থিতিও আমাদের দেশে অনেক বেশি। থ্যালাসেমিয়ার মতো সিকলসেল ডিজিজও দেশের বিভিন্ন অংশে বিপদ হয়ে দেখা দেচ্ছে।
ভারতীয়দের মধ্যে পাঁচ শতাংশের কিছু বেশি থ্যালাসেমিয়া রোগী আছেন। কিন্তু সিকলসেল ডিজিজও আগামীদিনের বিপদ হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যেই দেশের কয়েকটি অংশে ও কিছু শ্রেণীর ষাট শতাংশ মানুষের মধ্যে এই অসুখ দেখা দিয়েছে। এই সব রোগের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্যসরকারী স্তরে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত তেমন কোন ফল পাওয়া যায় নি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে এখানে মাননীয় মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা সিকলসেল ডিজিজ ও অপুষ্টি জনিত অ্যানিমিয়ায় চিকিৎসার ICMR এর গাইডলাইন প্রকাশ করেন। নিকট ভবিষ্যতে এই অসুখগুলির চিকিৎসায় এটী অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডাঃ তুফানকান্তি দোলাই জানান যে বিভিন্ন রক্তের রোগ ও রক্তের গঠনগত ত্রুটির বিভিন্ন অত্যাধুনিক চিকিৎসা, গবেষণা ও চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনাই এই সন্মেলনের মুল উদ্দেশ্য। চার দিনের এই সন্মেলনে দেশ বিদেশের প্রবাদপ্রতীম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গবেষক ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই বিষয়ে জ্ঞানের আদান প্রদান হবে। সম্মৃদ্ধ হবে এদেশের রক্ত সম্পর্কিত চিকিৎসা ব্যবস্থাও। অ্যানিমিয়া, ও সিকলসেল অ্যানিমিয়া সম্পর্কিত জনস্বাস্থ্যের উন্নতিই এই সন্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য। আশা করা যায় একই সঙ্গে থ্যালাসেমিয়া ও আন্যান্য রক্তের অসুখ এবং লিউকেমিয়া, মায়োলোমা বা লিম্ফোমার মতো বিভিন্ন রক্তের ক্যান্সারের চিকিৎসার অনেক নতুন দিক উন্মুক্ত হবে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রায় পনেরশ চিকিৎসক এই কনফারেন্সে যোগদান করবেন। এঁদের মধ্যে যেমন ASH, EHA, Sickle Global Network, ICMR, Delhi, MOTA বা NHA এর মতো সংগঠনের চিকিৎসকরা আছেন তেমনই আছেন কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরাও। প্রবাদপ্রতীম বাইশ জন হিমাটোলজির অধ্যাপক – বিজ্ঞানীরা সন্মেলনের সিএমই ও ওয়ার্কশপ পরিচালনা করবেন, বক্তব্য রাখবেন দেশের সাড়ে তিনশ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ হেমাটোলজি ও ব্লাড ট্রান্সফিউশনের (ISHBT) পূর্বাঞ্চলীয় শাখা ইস্টার্ন ইস্টার্ন হেমাটোলজি গ্রুপ ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ হেমাটোলজি ও ব্লাড ট্রান্সফিউশনের (ISHBT) তেষট্টিতম বার্ষিক সন্মেলন (HAEMATOCON – 2022) এর আয়োজন করেছে।ISHBT সভাপতি অধ্যাপক H. পতি বলেন যে পুর্ব ভারতের প্রত্যন্ত প্রান্তেও প্রতিটি নাগরিকের কাছেই রক্ত সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসার সুযোগ পৌঁছে দেওয়াই তেষট্টি বছরের পুরান এই দেশের একমাত্র হেমাটোলজিস্টদের আঞ্চলিক সংঠনের উদ্দেশ্য। ISHBTর সম্পাদক অধ্যাপক মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য্য বলেন যে ISHBT পুর্ব ভারতে সাধারণ চিকিৎসকদের মধ্যে হেমাটলজির পঠনপাঠন, গবেষণা প্রভৃতির উপরে নিয়মিতভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। চিকিৎসকরা আছেন তেমনই আছেন কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরাও। ISHBTর অ্যাকাডেমিক উইং ‘ইন্ডিয়ান কলেজ অফ হেমাটোলজি’ এগুলি দেখাশোনা করে থাকে। এছাড়াও সরকারী প র্যায়ে হেমাটোলজি সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য সম্প্রতি একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়েছে।